Latest

8/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কি এক রাতে নয় জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতেন?

হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কি এক রাতে নয় জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতেন?

ইসলাম-বিদ্বেষীদের খুব প্রিয় মুখরোচক একটি অভিযোগ হচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ ( (সা.) কি এক রাতে নয় জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতেন আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একরাতে নয় জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতেন। এই লেখাতে আমরা সেই অভিযোগকে যাচাই করে দেখবো।

প্রথমে নিচের হাদিসটা দেখুন-

আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন:

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে তাঁর সব স্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করতেন এবং সই সময় তার নয় জন স্ত্রী ছিল। [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ২৮৪, ইংরেজি: ১।৫।২৮২, সুন্নাহ.কম: ৫।৩৬]



খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, একজন দায়িত্বশীল স্বামীর জন্য তার সব স্ত্রীদের সাথে দিনে/রাতে একবার সাক্ষাত করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ালো ইংরেজি অনুবাদক যখন এ সংক্রান্ত অন্য দুটি হাদিসের অনুবাদে ব্র্যাকেটে এই সাক্ষাতকে ‘have sexual relation with’ দ্বারা ব্যাখ্যা করলেন:

Narrated Anas:
The Prophet I used to go round (have sexual relations with) all his wives in one night, and he had nine wives. [Bukhari  Vol.7, Book 62, No.: 6]


Narrated Anas bin Malik:
The Prophet used to pass by (have sexual relation with) all his wives in one night, and at that time he had nine wives. [Bukhari  Vol.7, Book 62, No.: 142]


ইংরেজি অনুবাদক সম্ভবত প্রভাবিত হয়েছেন নিচের হাদিস দ্বারা:

কাতাদা (রা.) হতে বর্ণিত:

আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, “নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] দিনে এবং রাতে চক্রাকারে তাঁর সকল স্ত্রীদের সাথে সাক্ষাত করতেন এবং তাঁরা সংখ্যায় এগারো জন ছিলেন।” আমি আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কি এই পরিমাণ শক্তি ছিল? আনাস (রা.) উত্তর দিলেন, “ আমরা বলতাম যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ত্রিশ জনের শক্তি দান করা হয়েছে।” আর সাঈদ কাতাদা (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আনাস (রা.) তাঁকে শুধু নয়জন স্ত্রীর কথা বলেছেন। [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ২৬৮, ইংরেজি: ১।৫।২৬৮, সুন্নাহ.কম: ৫।২১]


যদিও এই হাদিসেও সহবাসের কোন উল্লেখ নাই, তবুও যেহেতু শক্তির প্রসঙ্গ এসেছে তাতে হয়ত ইংরেজি অনুবাদক ধরে নিয়েছেন এখানে সাক্ষাত বলতে সহবাসকে বুঝানো হয়েছে। কেননা সহবাসের ক্ষেত্রেই শক্তির প্রসঙ্গ আসতে পারে, শুধু সাক্ষাতের ক্ষেত্রে শক্তির প্রসঙ্গ আসার কথা না। আমি যদিও নিশ্চিত নই যে আসলেই আনাস বিন মালিক (রা.) এখানে সাক্ষাত বলতে সহবাসকে বুঝিয়েছেন কিনা কেননা সেক্ষেত্রে তিনি সরাসরি সহবাসের কথা উল্লেখ করলেই পারতেন; তথাপি তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি আসলেই আনাস বিন মালিক (রা.) এখানে সাক্ষাত বলতে সহবাসকেই বুঝাতে চেয়েছেন। এবার আসুন হাদিসটা একটু ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করি।

খুব সঙ্গত প্রশ্ন হচ্ছে:

আনাস বিন মালিক (রা.) এই কথা কার কাছ থেকে শুনেছেন, স্বয়ং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হতে, না তাঁর কোন স্ত্রীর নিকট হতে?

এই হাদিসে এ-সম্পর্কে কোন বক্তব্য নাই। অথচ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর স্ত্রীগণ ব্যতিত অন্য কারো পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে, তাঁরা স্বামী-স্ত্রী সাক্ষাতকালে সহবাস করেছিলেন কিনা।

কাজেই আমরা যুক্তিসংগত ভাবেই ধরে নিতে পারি যে, যদি আনাস বিন মালিক (রা.) এই হাদিসে সহবাসকেই ইঙ্গিত করে থাকেন- তবে সেটা তার নিজস্ব ধারণা। সেই ধারণা ঠিকও হতে পারে, বেঠিকও হতে পারে। তবে আমরা খুব দৃঢ়তার সাথেই এই ধারণাকে ভুল বলতে পারি।

কেন?

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য পর্যায়ক্রমে একদিন/একরাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। এটা সুবিদিত এবং এ সংক্রান্ত হাদিসের কোন অভাব নেই, উদাহরণ হিসেবে নিচের হাদিসটি পেশ করা হলো:

যখনই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সফরে যেতে চাইতেন, তিনি লটারি করতেন যে কোন স্ত্রী তার সঙ্গী হবে। যার নাম আসতো তিনি তাকেই নিতেন। তিনি তাদের প্রত্যেকের জন্য একদিন এবং একরাত নির্দিষ্ট করে দিতেন। কিন্তু সাওদা বিনতে জামআ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্ত্রী আয়শা(রা.)-কে তার (ভাগের) দিন এবং রাত দান করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খুশি করার জন্য। [সূত্র: সহিহ বুখারি, আরবী: ২৫৯৩, ইংরেজি অনুবাদ: ৩।৪৭।৭৬৬, সুন্নাহ.কম: ৫১।২৭]


দিন-রাত বণ্টনের এই বিষয়টিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী অবস্থায়ও স্ত্রীদের অনুমতি ব্যতিত তিনি এর অন্যথা করেন নাই:

আয়শা (রা.) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থতার সময় তাঁর স্ত্রীদেরকে ডাকালেন। তাঁরা একত্রিত হলে তিনি বললেন: ‘আমি তোমাদের সকলের সাথে সাক্ষাত করতে অক্ষম। তোমরা যদি আমাকে আয়শার সাথে অবস্থান করার অনুমতি দিতে মনস্থ করো, তবে দিতে পারো।’ কাজেই তাঁরা তাকে অনুমতি দিলেন। [সূত্র: সুনান আবু দাউদ, আরবী: ১২।২১৩৭, ইংরেজি অনুবাদ: ১১।২১৩২, সুন্নাহ.কম: ১২।৯২]


কাজেই এক স্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত সময়ে তিনি অন্য স্ত্রীদের সাথে সহবাস করবেন, এটা কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।

তবে কি- যে দিন এক স্ত্রীর পালা আসতো, সেদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য কোন স্ত্রীর সাথে সাক্ষাতও করতেন না? অবশ্যই করতেন, নিশ্চয়ই করতেন এবং প্রত্যেকের সাথেই সাক্ষাত করতেন। কিন্তু অন্য কোন স্ত্রীর সাথে ঐ দিনে/রাতে সহবাস করতেন না। না এটা আমার গলাবাজি নয়, আমার ব্যক্তিগত কোন ধারণাও নয়, বরং একেবারে ঘরের মানুষের মুখের কথা। শুনুন তাহলে-

হিশাম ইবনে উরওয়াহ তার পিতা হতে বর্ণনা করেন:

আয়শা (রা.) বলেন: হে আমার ভাতিজা! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমাদের সাথে তার অবস্থানের সময়কে ভাগ করার ব্যাপারে আমাদের কোন একজনকে অন্য জনের ওপর প্রাধান্য দিতেন না। এটা খুব কমই হতো যে কোনদিন তিনি আমাদের সাক্ষাত দেন নাই। তিনি সহবাস ব্যতিরেকে প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে আসতেন যতক্ষণ না যার দিন ছিল তার কাছে পৌঁছতেন এবং তার সাথে রাত কাটাতেন। [It was very rare that he did not visit us any day (i.e. he visited all of us every day). He would come near each of his wives without having intercourse with her until he reached the one who had her day and passed his night with her.] [সূত্র: সুনান আবু দাউদ (হাদিসের প্রাসঙ্গিক অংশ), আরবী: ১২।২১৩৫, ইংরেজি অনুবাদ: ১১।২১৩০, সুন্নাহ.কম: ১২।৯০]


নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এঁর একেবারে ঘরের মানুষ আয়শা (রা.) এঁর এই বক্তব্যের পর, অন্য কারো বক্তব্য বা ধারণার আর কোন সুযোগ অবশিষ্ট থাকে না। কাজেই এক রাতে নয় জনের সাথে সহবাস করার গল্পটা একেবারেই ভিত্তিহীন।

Post a Comment

0 Comments