Latest

8/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

তাজওইদ(তাজবিদ)ঃ সহীহভাবে কোরআন শিক্ষা

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, 
'তাজউইদ' বইটা উস্তাযা যয়নব আল গাজী আপুর লেখা একটি বই। যা থেকে আমরা সহজেই কোরআন পাঠ শুদ্ধভাবে পড়তে পারি ইনশাআল্লাহ। 
প্রারম্ভিকাঃ
السالم ىلع أرشف األنبياء واملرسلني 

:نبينا حممد، وىلع آهل وصحابته أمجعني. أما بعد
সমস্ত শোকর কেবলই আল্লাহ রব্বুল আলামীনের, যিনি আমাকে তাঁর পবিত্র কালামের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত এই শাস্ত্রের সামান্য খেদমত করার তাওফিক দান করেছেন।  আমার তাজওইদ শিক্ষার হাতেখড়ি হয়েছিল আমাদের এলাকার ছোটখাটো একটি  প্রাইভেট হিফজখানায়। শুদ্ধভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারতাম বলে সে সময় তাজওইদ শেখার প্রতি আলাদা কোনো আগ্রহ ছিল না আমার। এমনকি সপ্তাহে যেদিন তাজওইদের দারস হতো সেদিন আমি মাদ্রাসাতেই যেতাম না। তাজওইদকে মনে হতো খুব কঠিন কিছু।  এভাবে দেখতে দেখতে এক মাস কেটে গেল। মাস শেষে দেখি তাজওইদের দারসের কোনো পরীক্ষা নেওয়া হয় না। মনে মনে খুশিই হলাম। পরীক্ষার ভয় যেহেতু ছিল না তাই এরপর থেকে আর কোনো দারস আমি মিস দিইনি। দারসে উপস্থিত হয়েছি। মুহতারামাহ উস্তাযাহ হোওয়াইট বোর্ডে যা লিখেছেন সবার মতো আমিও তা-ই খাতায় নোট করেছি। আগামাথা কোনো কিছুই আমি বুঝতাম না। আসলে চেষ্টাও খুব একটা  ছিল না। দারস শেষেকেউ কেউ উস্তাযাকে প্রশ্ন করত। একদিন আমিও করলাম। উস্তাযা অনেক সময় নিয়ে যত্ন করে আমাকে বোঝালেন। যেহেতু আমার দিকেই তাকিয়েছিলেন তাই খুব মন লাগিয়ে তাঁর সব কথা শুনলাম। দারস শেষে আবিষ্কার করলাম এর থেকে মজার সাবজেক্ট আর কী হতে পারে? আমি যদিও শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতাম; কিন্তু আমার জানা ছিল না কেন একেক জায়গায় একেকভাবে আমাকে তিলাওয়াত করতে হচ্ছে! কোথাও অনেক লম্বা টান দিতে হচ্ছে। কোথাও সামান্য টান দিতে হচ্ছে। কোথাও গুন্নাহ করতে হচ্ছে। কোথাও গুন্নাহ ছাড়তে হচ্ছে। কোনো কোন আমি মোটা করে পড়ছি। আবার কোনো কোনো হারফকে চিকন করে পড়ছি। কিন্তু এমনটা কেন করছি তাজওইদ শেখার মাধ্যমে আমি তা বুঝতে পারলাম।  আমার সেই উস্তাযার ওপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর রহমতের বারিধারা  বর্ষণ করুন। পরম যতনে তিনি আমাকে তাজওইদ শিখিয়েছেন। কুরআন হিফজ করা
থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন কুরআন শুদ্ধভাবে পড়ার প্রতি। তিনি সব সময় বলতেন, “ মুখস্থবিদ্যা সবার এক রকম থাকে না। তবে সময় খরচ করে দিল-মন লাগালে যেকোনো বিষয় তুমি রপ্ত করতে পারবে। না বুঝে পুরো ৩০ পারা হিফজ করতে হবে না। তবে যতটুকু করবে বুঝে বুঝে করবে। তবেই তোমার অন্তর প্রশান্তি পাবে।”
তাঁর কাছে দারস কমপ্লিট করে আমি মদিনার মাসজিদে নববিতে ভর্তি হয়ে সেখানে  তাজওইদের ওপর আরও বিস্তারিত দারস নিয়েছি আলহামদুলিল্লাহ্। তখন থেকেই মনের ভেতর সুপ্ত বাসনা ছিল, তাজওইদের ওপর দু-চার কলম লিখব। তবে কোনোদিন ভাবিনি, ওয়াল্লাহি কোনোদিন ভাবিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর দয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে আমার মতো একজন অধম বান্দির এই সুপ্ত বাসনা কবুল করে  নেবেন।  আলহামদুলিল্লাহ্, সমস্ত শোকর একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার। সম্পূর্ণ কিতাবটি লিখেছি মদিনার মাসজিদে নববিতে বসে। প্রতিবার লেখার আগে নামাজ পড়ে দুআ করে নিয়েছি। আমার হাত দিয়ে যে লেখা বের হয় তা যেন কেবলই কল্যাণের জন্য হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে কবুল করে নিন। আমীন। কুরআন শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতে না পারাটা দোষের কিছু না। তবে শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করার চেষ্টা না করাটা মারাত্মক দূষণীয় ও গুনাহের কাজ। হরফসমূহ না চেনা, সেগুলোর মাখরাজ ও বৈশিষ্ট্য না জানা থাকার ফলে আমরা বাংলা অক্ষর দিয়ে আরবি লেখা কুরআন পড়ে তার অর্থ সম্পূর্ণ বিকৃত করে উল্টো গুনাহগার হচ্ছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করুন। এর থেকে উত্তরণের জন্য তাজওইদ শেখার কোনো বিকল্প নেই। তাজওইদের দারস অনেক অনেক বিস্তারিত। আমি খুব সংক্ষেপে আর সহজ ভাষায় সবগুলো বিষয় নিয়েই লেখার চেষ্টা করেছি। তবে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু খুঁটিনাটি বিষয় বাদ দিয়েছি। ইনশাআল্লাহ আগামীতে আল্লাহ আবার তাওফিক দিলে আরও বিস্তারিত করে লেখার চেষ্টা করব।  যারাই এই বইটি পড়বেন, আমার অনুরোধ থাকবে একজন যোগ্য উস্তাযের কাছে বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের উচ্চারণ শুদ্ধ করে নেবেন। মনে করবেন এই তাজওইদ আপনার জন্য একটি চাবি। এই চাবি হাতের মুঠোয় এসে গেলে একে একে অনেকগুলো দরজা আপনার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে। সহিহভাবে তিলাওয়াত করার মাধ্যমে মনের ভেতর যখন অন্যরকম পরিতৃপ্তি অনুভব করবেন তখনই কেবল বুঝবেন কী নিয়ামত আপনার অর্জিত হয়েছে।
এই বইটি লেখার পর বারবার মনোযোগ সহকারে তা নিরীক্ষণ করা হয়েছে। উপস্থাপনা  ও ভাষাগত উৎকর্ষের জন্য মুহতারাম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসউদ অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করেছেন। সকলের সম্মিলিত চেষ্টার পরেও এতে ত্রুটি থেকে যাওয়া  অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমন কিছু গোচরে এলে পাঠকদের কাছে আমার সবিনয় নিবেদন থাকবে বিষয়টি অবগত করানোর জন্য। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী সময়ে তা শুধরে নেওয়া হবে।
মাকতাবাতুল আসলাফের কাছেও আমি অশেষ কৃতজ্ঞ। বইটিকে ছাপার অক্ষরে পাঠকদের সামনে নিয়ে আসতে তারা যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাদের কবুল করে নিন। আমীন।
পুনশ্চ : এটি উক্ত কিতাবের তৃতীয় সংস্করণ, এই সংস্করণে বেশ কিছু পরিবর্তন ও
পরিবর্ধনের কাজ হয়েছে। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো, দুটি অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। আশা করি এর মাধ্যমে কিতাবটি আরও বেশি উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ।

যাাইনাাব হাামদুল্লালাহ আল-গাাযী
মদিনা মুনাওওয়ারাহ
২২.১০.১৪৪০ হিজরী
২৪.০৬.২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ





Post a Comment

0 Comments